'বাচ্চু রাজাকার' (বাচ্চু মিয়া) কি আসলেই রাজাকার ছিলেন নাকি জোর করে রাজাকার বানানো হয়েছিল???
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, একটি রাজনৈতিক দল, মুসলমানদের জন্য গোটা বাংলাদেশকে এক নির্যাতিত কারাগারে পরিণত করেছে। এই নির্যাতনের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাচ্চু মিয়া, যিনি আদালতের ভাষায় 'বাচ্চু রাজাকার' নামে পরিচিত। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, যাকে এলাকাবাসী বাচ্চু রাজাকার হিসেবেই চিহ্নিত করে, তার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বাচ্চু রাজাকার: পরিচিতি ও অভিযোগ
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, যিনি বাচ্চু রাজাকার নামে পরিচিত, তার বিরুদ্ধে ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, দেশান্তরিতকরণসহ ১০টি ঘটনায় ২২টি অভিযোগ।
বিচার প্রক্রিয়ার সময়, ২২ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষ্য প্রদানকারী ভিকটিম এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। আদালতের রায়ে বলা হয়, বাচ্চু রাজাকার মোট আটটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায়
আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, বাচ্চু রাজাকারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড ও চারটিতে কারাদণ্ড দেয়ার সুযোগ থাকলেও মৃত্যুদণ্ডের কারণে সেসব অপরাধের বিষয়ে দণ্ডাদেশ দেয়নি ট্রাইবুনাল।
বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার এক বছর পর, ২০১২ সালের ২২ মার্চ মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়।
স্থানীয় জনগণের মতামত
বাচ্চু রাজাকার সম্পর্কে স্থানীয় জনগণের মতামত একেবারে ভিন্ন। অনেকেই তাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারা বলছেন, স্বাধীনতার সময় তিনি এলাকার লোকজনকে রক্ষা করেছেন।
স্থানীয় এক সাক্ষী বলেন, "আমরা বাচ্চু রাজাকারকে ভালো লোক হিসেবে জানি। আমাদের কোনো ক্ষতি হয়নি তার দ্বারা।" এভাবে অনেকেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করেছেন।
সাক্ষীদের উপর চাপ
বিচার প্রক্রিয়ায় অনেক সাক্ষীকে চাপ প্রয়োগ করে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই জীবনের নিরাপত্তার কারণে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য হয়েছেন।
একজন সাক্ষী বলেন, "আমাকে জোর করে সাক্ষ্য দিতে বলা হয়েছিল। আমি জানি না, কেন আমাকে এই কাজ করতে হলো।" এভাবে অনেকেই চাপের শিকার হয়েছেন।
বাচ্চু রাজাকার: একজন নির্যাতিত
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন এবং বলেছেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, "আমি ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিবার ছাড়া একাকী জীবন যাপন করেছি।"
তার মেয়ে সামারিয়া জান্নাতি তার বাবার উপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, "আমার ভাইদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।"
আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থা এবং অভিযোগ
আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা কমে গেছে। অনেকেই মনে করেন, এই বিচার প্রক্রিয়া সঠিক নয় এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা করা হচ্ছে।
বাচ্চু রাজাকার এবং তার পরিবার
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, যিনি বাচ্চু রাজাকার নামে পরিচিত, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় জনগণের মতামত এবং সাক্ষীদের বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, তিনি একজন নির্যাতিত ব্যক্তি।
বর্তমান সরকারের কাছে তার দাবি, যেন তাকে সুবিচার দেয়া হয় এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের পুনর্বিবেচনা করা হয়।

No comments